রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

অবশেষে দিল্লিতে হারের বৃত্ত ভাঙলো বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার, একুশের কণ্ঠ অনলাইন:: চলমান বিশ্বকাপে চেন্নাই, পুনে, মুম্বাই, কলকাতা ঘুরে অবশেষে দিল্লিতে স্বস্তির জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ঘুরে ঘুরে আরও চারটি ভেন্যুতে ছয়টি ম্যাচ খেলেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা; যার সবগুলোতেই হার হয়েছে সঙ্গী। অবশেষে পাক্কা ২৯ দিন পর দিল্লিতে শ্রীলঙ্কাকে শাসন করলো বাংলাদেশ।

অবশ্য সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেনের দারুণ ব্যাটিং জয়ের মঞ্চ গড়লেও শেষ দিকে জয় পেতে বাংলাদেশকে যথেষ্ট বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সোমবার শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়ার দৌড়ে টিকে থাকলো সাকিব বাহিনী।

৭ অক্টোবর ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর বাংলাদেশ গত ২৯ দিন ধরে হারের বৃত্তেই আটকে ছিল। অবশেষে দিল্লিতে এসে জয়ের দেখা পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। এই জয় বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলে কোনও ভূমিকা না রাখলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোয়ালিফাই করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে ২৮০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই লক্ষ্য সাকিব-শান্তর ১৬৯ রানের দাপুটে জুটিতে বাংলাদেশ সহজেই ছুঁয়ে ফেলতে পারতো। কিন্তু গেম অ্যাওয়ারনেস ও সেন্সিবল ব্যাটিংয়ের ঘাটতির কারণে শেষ দিকে বাড়তি ৩টি উইকেট হারাতে হয়েছে।

শুরুতে বাংলাদেশ টস জিতেই শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। লঙ্কান মিডল অর্ডার ব্যাটার চারিথ আসালাঙ্কার সেঞ্চুরিতে ২৭৯ রান তুলে তারা। দিল্লির উইকেটে এই লক্ষ্যটা মামুলিই ছিল। কিন্তু ৬.২ ওভারের মধ্যে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি দিলশান মাদুশাঙ্কা বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে আউট করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তানজিদকে ৯ রানে আউটের পর বিদায় করেছেন ২৩ রান করা লিটন দাসকেও।

এরপর তৃতীয় উইকেটে দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন শান্ত ও সাকিব। দু’জনের গড়া ১৬৯ রানের জুটিতেই বাংলাদেশ জয়ের পথটা পেয়ে গেছে। এটি এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম শতরানের জুটি। শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সাকিব দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন। সপ্তম ওভারে লিটন ফেরার পর উইকেটে এসেছিলেন তিনি। তখন থেকেই সাকিবকে উত্ত্যক্ত করে গেছেন লঙ্কান ফিল্ডাররা। সাকিব তার পরেও ঠাণ্ডা মাথায় খেলে গেছেন।

উত্তেজনাকর মুহূর্তের ঘটনার সূত্রপাত মূলত শ্রীলঙ্কার ইনিংসে। এদিন সাকিবের আবেদনের প্রেক্ষিতে ম্যাথুজ বিরল এক আউট হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো টাইমড আউটের শিকার হন তিনি। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে উত্তেজনাও বিরাজ করেছে। সেঞ্চুরি থেকে ১৮ রান দূরে থাকতে সেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের বলে আসালাঙ্কার দারুণ ক্যাচে সাজ ঘরে ফেরেন সাকিব। ৬৫ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় সাকিব নিজের ৮২ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন।

সাকিবকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করার পর ম্যাথুজ আগের ইনিংসের ক্ষোভও উগড়ে দেন। হাতের ঘড়ি দেখিয়ে সাকিবকে যেন ম্যাথুজকে বলতে চাইলেন, ‘তোমার সময় শেষ।’ শুধু একটিই নয়, এমন খণ্ড খণ্ড অনেক ঘটনা ঘটেছে ম্যাচটিতে।

সাকিবকে আউট করার পরের বলে ম্যাথুজ শিকার করেন সেট ব্যাটার শান্তকেও। সাকিবের মতো তিনিও সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন। আউট হয়েছেন ৯০ রানে। সঙ্গীকে হারিয়ে মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটে শান্তর। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটি কাট করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যাটে বল লেগে বলটি সরাসরি আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। তাতে দারুণ এক ইনিংসের মৃত্যু হয় শান্তর।

সাকিব-শান্তর বিদায়ের পর বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ২১১। এরপর মুশফিকুর রহিম (১০) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে (২২) হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, মিরাজ যেভাবে আউট হয়েছেন তাতে করে তাদের গেম অ্যাওয়ারনেসের ঘাটতি আবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যদিও তাওহীদ হৃদয় তার সিগনেচার দুটি শটে ছক্কা মেরে সেই চাপ কিছুটা কমিয়ে আনেন। তবে মিরাজ লম্বা শট খেলতে গিয়ে বিদায় নিলে শেষ দিকে আবারও শঙ্কা জাগে। কিন্তু বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া তানজিম হাসান সাকিব সেই চাপ সামলে ৫ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করতে অবদান রেখেছেন। ২ ছক্কায় ৭ বলে ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তাওহীদ।

লঙ্কান বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন মাদুশাঙ্কা। লঙ্কান এই পেসার শিকার করেছেন তিনটি উইকেট। এছাড়া মাহিশ থিকশানা ও ম্যাথুজ দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে দারুন শুরু এনে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম। ম্যাচের ষষ্ঠ বলেই কুশল পেরেরাকে (৪) আউট করেন তিনি। তবে শুরুর ধাক্কা সামলে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কান দল। দ্বিতীয় উইকেটে কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে ৬১ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। আরও বড় জুটি গড়ার আগে ১৯ রান করা মেন্ডিসকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন সাকিব। পরের ওভারেই শ্রীলঙ্কাকে আরেকটি ধাক্কা দেন বিশ্বকাপে অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা নিশাঙ্কার (৪১) স্টাম্প ভেঙে দেন তরুণ পেসার।

৭২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার হাল ধরেন চারিথ আসালাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন। ৪১ রানে সামারাবিক্রমাকে আউট করে এই জুটিও ভাঙেন সাকিব। এরপর ম্যাথুজ ক্রিজে নামলেও টাইমড আউটের শিকার হয়েছেন। এই আউটে মাঠে উত্তেজনাও তৈরি হয়। তার পর আবার ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও থিকশানার সঙ্গে দুর্দান্ত জুটি গড়ে ইনিংস মেরামত করেন সেঞ্চুরিয়ান আসালঙ্কা। লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২৭৯ রানের সংগ্রহ এনে দেন তিনি। অষ্টম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিও তুলে নেন লঙ্কান এই ব্যাটার। ১০৫ বলে করা তার ১০৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের ওপর দাঁড়িয়েই শ্রীলঙ্কা ২৭৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে।

বাংলাদেশের হয়ে ৮০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ছিলেন অভিষিক্ত তানজিম। এছাড়া শরিফুল ও সাকিব দুটি করে এবং মিরাজ নেন একটি উইকেট।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com